“নায়ক” শব্দটা শুনলে কেমন মানুষের ছবি ভাসে? সুঠাম দেহের কেউ একজন! একটা ঘুষি মারলে সেই শব্দ তিনবার প্রতিধ্বনিত হয় পড়ে আর চারদিকে দশ-বারো ভিলেন উড়ে গিয়ে পড়ে! অথবা চোখে কালো ঘুটঘুটে চশমা, চুলে জেল আর পকেটে হাত দিয়ে ঘোরাঘুরি করা কেউ?
অথবা চোখের নিমিষে নায়িকাকে নিয়ে বন-বাদাড়ে দাপাদাপি। অথবা, দুইহাতে মেশিনগান নিয়ে মুড়ি-মুড়কির মত গুলি করতে করতে এগিয়ে আসা একজন!!
আমার চোখে যিনি নায়ক, তিনি হলেন অকুতভয় একজন। একইসাথে প্রতিরোধ আর ভালোবাসা যার চোখে।
প্রিয় নায়কের অনুকরণ করা আমাদের অনেকের স্বভাব। নাহলে ঈদের বাজারে এত বাহারি নামের আমদানি ঘটতো না। আমি আমার প্রিয় নায়ক কে দেখিনি। কিন্তু তার তেজ, আর বীরত্ব অনুভব করতে পারি। মন প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করি তাঁরই মত মানসিকতা নিজের মনে ধারণ করতে।
মুন্সি আব্দুর রউফ।
বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ।
ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একজন ল্যান্স নায়েক। মেশিনগানার। সেক্টর কমান্ডার মেজর মীর শওকত আলীর মুখে এই “সামান্য” ল্যান্স নায়েকের অসামান্য বীরত্বগাঁথা একদিন শুনি। প্লাটুনের সৈন্যদের জীবন বাঁচানোর জন্য মর্টারের হামলা অগ্রাহ্য করে অবিরাম নিজের মেশিনগান থেকে গুলি করে গিয়েছেন। একা প্রতিরোধ করেছেন সাত স্পীড বোট আর দুই লঞ্চের শত্রুর বিরুদ্ধে!
সিনেমার নায়করা ৯৯.৯৯ ভাগ সময়ে মরেনা।
বাস্তবের এই নায়কের ভাগ্য এমন ছিলোনা। শহীদ হয়েছেন ।
আমাদের কাছে দৃষ্টান্ত তুলে ধরার জন্য। ভালোবাসার তীব্রতা
কত গভীর হতে পারে যে মৃত্যু নিশ্চত জেনেও একবিন্দু সরে আসেননি!
আর আমাদের দেশপ্রেম??
অনেকের ভাবসাব দেখে মনে হয় আরেকটা মুক্তিযু্দ্ধের অপেক্ষায় আছে। যুদ্ধ শুরু হলেই ঝাঁপিয়ে পড়বে। কিন্তু তার আগ পর্যন্ত আর কোন কাজ নেই।
লিখে হাতি-ঘোড়া মেরে সব ঠান্ডা করে দেন এমন মানুষ ভুরিভুরি। দেশপ্রেমের বাণী উচ্চারণ করতে করতে নাকে-মুখে ফেনা চলে আসে অনেকের! কিন্তু এই সব ঘোড়ার ডিম দিয়ে কাজের কাজ কিছু হবেনা। যা করার আমাদের করতে হবে। সচেতন হতে হবে। সচেতন করতে হবে আশেপাশের মানুষদের। একটা ২২-২৩ বছরের ছেলের আলসেমি দেখলে ইচ্ছা করে তার পেছনে একটা পাগলা কুকুর লেলিয়ে দেই!
শহীদ হওয়ার সময় কয়েকজন বীরশ্রেষ্ঠের বয়স বলি।
বীরশ্রেষ্ঠের হামিদুর রহমানের বয়স ছিল ১৮ বছর।
বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের বয়স ছিলো ২৪ বছর।
বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর এর বয়স ছিলো ২৩ বছর।
আমরা এই বয়সের আশেপাশেই আছি।
এখন পর্যন্ত কি করলাম দেশের জন্য?
ছাত্রাবস্থায় যদি ঝিম ধরে পড়ে থাকি, তাহলে, পড়ালেখা শেষ করে কি এমন দুনিয়া উদ্ধার করা কাজ করতে পারবো দেশের জন্য, সেটা আর অনুমান করতে হয়না। ……………………….
একটা জিনিস বুঝিনা! এদেশের ডাস্টবিন গুলোও জাপান থেকে আনতে হয়! এটা কেমন কথা!! কয়দিন পর শরীরে মশা বসলেও আমরা অপেক্ষা করবো কখন জাতিসংঘ মিশনের এক সৈন্য এসে সে মশা মেরে দিয়ে যাবে! :O
কি কি কাজ করা যেতে পারে তার কিছু নমুনা দেই। এটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত মতামত। এছাড়াও আরো অনেক অনেক রকম কাজ আছে, যার মধ্যমে দেশের সেবা করা যায় নিজ নিজ অবস্থানে থেকে। তার জন্য বিশাল সাজ-সরঞ্জামের দরকার নেই। দরকার শুধু আন্তরিকতা।
০১। ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে কাজ করে এমন অনেক সংগঠন আছে। যারা বিভিন্ন ধরণের সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ করে। CommunityAction, 1 Degree Initiative, এধরনের সংগঠনের কথা। আমাদের অনেক ভালো কিছু করার ইচ্ছা আছে, কিন্তু করা সম্ভব হচ্ছেনা অভিজ্ঞতার অভাবে, একতার অভাবে। এসব সংগঠন আমাদের দিতে পারে সেই একতাবদ্ধ হওয়ার ছাউনি।
০২। বাংলা কমিউনিটিব্লগ এখন অনেক বেশি জনপ্রিয়। এবং যথারীতি অন্যান্য মিডিয়ার মত এটাও দূষিত হওয়া শুরু করেছে। হবেই না কেন? রাইফেলের মত গর্জে উঠার দরকার যাদের কলম আর কিবোর্ডের, তারাই হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলে তো ভালো কিছু হবে না। সুতরাং নিজের মতামত গুলো উচ্চস্বরে জানাতে হবে সবাইকে। আবর্জনা জাতীয় মানুষের কাছে নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিয়ে বসে থাকলে সেটা হবে দু:খজনক।
০৩। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর মত মানুষের/দেশের অভাব নেই। আমরা চুপ করে থাকলে আর্ন্তজাতিক মিডিয়াতে এসব অপপ্রচারই সবাই সত্য বলে মেনে নিবে। তাই, আমাদের এমনভাবে প্রতিবাদ করতে হবে যেন সেটা সবার কানেই পৌঁছায়।
০৪। চাইলেই অবদান রাখা যায় এরকম অনেক বিষয় আছে ইন্টারনেটে। যেমন: উইকিপিডিয়া, OpenStreetMap। এসব জায়গাতেও বাংলাদেশের সম্পর্কে অনেক কম তথ্য আছে।
একজন বিদেশী এসে নিশ্চয় নিজের গরজে এ সব কাজ করে দিয়ে যাবেন না। যা করার আমাদেরই করতে হবে।
০৫। আমরা প্রায় সময় বলি, “আরে বাঙালি না! এই জন্যই এ অবস্থা!”
মানে কি!! নিজেদের দোষত্রুটি আমরা চাপিয়ে দিচ্ছি পুরো জাতির উপর! নিজেরা আর কিছু না পারি, নিজের অক্ষমতা কে যেন পুরো দেশের ঘাড়ে চাপিয়ে না দেই।
……………………..
কিবোর্ড হোক তবে মেশিনগান, ভাবনাগুলো বুলেট !
বীরশ্রেষ্ঠের হামিদুর রহমানের বয়স ছিল ১৮ বছর।
বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের বয়স ছিলো ২৪ বছর।
বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর এর বয়স ছিলো ২৩ বছর।—
অসাধারণ পর্যবেক্ষন!
‘আমরা এই বয়সের আশেপাশেই আছি.’
.. চালিয়ে যা পাঞ্চা… মোটর-সাইকেলে পড়ে হাত ভাঙুক, তারপরো লিখে যা!
তরুণ/যুবক বয়সের রক্তে অসীমকে ছোঁয়ার অদম্য কামনা থাকে।
সীমার বাঁধা ভাংগা কেবল তাদেরকে দিয়েই সম্ভব।
দারুণ লেখা ইয়াদ! পড়ে অনেক অনেক ভালো লাগলো। এধরণের আরো লেখককে আমি চিনি, যারা সিএ-এর সাথে জড়িত। তোমরা সবাই কলমকে তুলে নাও প্লিজ, কারণ এই লেখাগুলোতে ঘুম ভাংগানির সুর আছে। এগুলো মানুষের চেতনাকে জাগিয়ে তুলে।
—
এগিয়ে যাক কমিউনিটিএকশন, সফল হোক ইয়াদদের সবুজ স্বপ্নগুলো।
আল্লাহ ভরসা।