গতকালকে সূর্যদয় দেখে আমাদের কয়েকজনের মাথা এমনই খারাপ হয়েছে যে আমরা SMU এর কয়েকজন আর আমাদের বাকিদের গতকাল রাতেই রাজি করিয়ে ফেলেছিলাম এই স্বর্গীয় দৃশ্য দেখার জন্য। SMU এর কয়েকজন মেয়ে রাজি হয়েছে সকালের ঘুমটাকে বিসর্জন দিতে,ওদের ডাকার গুরুদায়িত্ব হাতে নিয়েছে সুহায়লী। আর সুহায়লী কোনো ভাবে না উঠতে পারলে আমার কাজ ওকে ফোন করে জাগানো। এতো মহান দায়িত্ব নিয়ে কি রাতে ঘুম হয়! আমার ঘুম ভাঙলো ৪টায়!
গভীর রাতে আরো আধা ঘন্টা গড়াগড়ি করে তারপর উঠেই গেলাম। নামাজ পরে অপেক্ষা করছি অন্যদের উঠার। ৫টা বাজতেই সুহায়লীর সাথে বের হলো indra, bhuban, fariha,noel। আর ছেলেদের মধ্যে থেকে চলে এলো bang lin। আমি ওর হাতের canon 5d ক্যমেরার দিকে তাকিয়ে ভাবলাম-আহারে আমার হাতে আজকে থাকলে তো ছবি তুলে ফাটায় ফেলতাম। বেন, তাহমিদও উঠে এলো ঘুম থেকে। তারপর অপেক্ষা……… অপেক্ষা…… অপেক্ষা। সকাল ৬টা বাজার পর আমরা বুঝলাম আকাশ ভর্তি মেঘ! সূর্য মামা মেঘের আড়ালে গা ঢাকা দিয়ে আকাশে উঠে গেছেন। মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো! যে যার ঘরে গিয়ে আর কিছুক্ষণ শোয়ার ব্যর্থ চেষ্টা ………
সকালের নাস্তার পর সবদিনের মতো বাচ্চাদের পড়ানো। কেনো যেনো বাচ্চারা আমাকে দেখলেই হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে দেয়! আর আমি হ্যান্ডশেক করতে করতে বাচ্চাদের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যাই। বাচ্চাদের আজকে করতে দেয়া হয়েছে অংক। যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ। আমার দায়িত্বে ক্লাস ফাইভ। এর নিচের ক্লাসে যারা ছিলো তাদের জন্য আমার মায়া লাগছিলো। এইখান থেকে একজন হাত টানে তো,ওইখান থেকে একজন কাপড়। আমার ক্লাসের এক স্টুডেন্ট আমাকে ডাকেঃ অ্যা ভাইয়া, একটু শুনেন! ক্লাস শেষে গল্প শুনলাম, ক্লাস নাইন-টেন এর ওরা নাকি ডাকেঃ হ্যালো ব্রাদার, একটু এদিকে!!!
আজকে শুক্রবার, তাই টিচারদের IT ক্লাস হবে না। আজকে আমরা সবাই মিলে ভ্যানে করে গ্রাম ঘুরবো!
১১টায় বের হলাম গ্রাম ঘুরতে। প্রতি ভ্যানে ৪ জন। আমার ভ্যানে আমি, বেন, indra ও wonder ling। এতোদিনে আমাদের সবার মধ্যে অনেক ভালো খাতির হয়ে গিয়েছে। চমৎকার গল্প চলতে লাগলো আর চারপাশের অপরূপ প্রকৃতি তো আছেই। আমার জন্মভূমি কতো সুন্দর তা আবার নতুন করে উপলব্ধি করলাম! হঠাৎ করে পেছনে চিৎকার শুনে দেখি আমাদের পিছনের ভ্যানের চালক ভ্যানের হ্যান্ডেল ধরে আকাশের দিকে উঠে যাচ্ছে,আর ভ্যানের পেছনের দিক নেমে যাচ্ছে মাটিতে!!! মাটিতে পড়ে গেলো পেছনের ভ্যানের সবাই। এবার সবাই সাবধানে বসে যাওয়া শুরু করলাম। এলাকার ডিগ্রি কলেজ ঘুরে চলে এলাম হাটে। যেইনা কিছু কেনাকাটা করার জন্য হাটে ভ্যানগুলো থামানো হয়েছে,অমনি চারপাশে এত্তো মানুষের ভিড়!!! মজা পেয়ে ইন্দোনেশিয়ান wonder ling বললো, “I am feeling like a celebrity”।
আড়াই ঘন্টা ঘুরে এসে অনেকে নামায পড়তে চলে গেলো। নামাযের পর দুপুরের খাবার শেষ হলো। ভাবীর হাতের রান্না যা কি অসাধারণ ছিলো তা লিখে বোঝানো সম্ভব নয় বলে আমি সে চেষ্টা করতে চাইনা।
এরপর কন্সট্রাকশন এর কাজ চললো আরো কিছুক্ষণ। কিন্তু আজকে তাড়াতাড়ি সে কাজেরও ছুটি!! মনে মনে গান গাই, “ছুটি,ছুটি,গরম গরম রুটি”!
বিকেলে ফুটবল,ব্যাডমিন্টন খেলার পর সন্ধ্যেয় খোলা উঠানে চাদর পেতে সবাই এক আকাশ তারার নিচে। একেক ভাষার গান চলতে লাগলোঃ ইংরেজী,তামিল,হিন্দি,চাইনিজ……… যার যা ভাষা। আর আমরা এতোগুলো বাঙ্গালী থাকতে কি বাংলা গান ছাড়া অন্য কোনটা পাত্তা পায়। হেড়ে গলায় সবাই মিলে মনের আনন্দে গান গাইতে লাগলাম সবাই……
রাত হয়ে যাওয়ায় সবাই খেয়ে দেয়ে ঘুমের প্রস্তুতি নিয়ে দেখি অন্যদিনের মতো SMU এর ওরা ঘুমিয়ে যায়নি। আমরাও জেগে রইলাম। রাত বারোটায় দেখি SMU এর স্টুডেন্টরা সবাই উঠানে নেমে এলো আর kaminy কে ঘিরে গাইতে লাগলো “happy birthday to you…..”। আমরাও যোগ দিলাম ওদের সাথে………
গভীর রাত,সবাই ঘুমাচ্ছে। আমার লেখাও শেষ। আর বাকি আছে দুইটা দিন,ভালো লাগছে না। এখানেই থেকে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে………. এই প্রকৃতি, এই মানুষগুলো, এই ঘরটা যেন আমার কতো পরিচিত, কতো প্রিয়…… আমার আনন্দের সঙ্গী।
জাহিদ,অ্যাকশনিয়ার
২৯/০৪/১১
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ একশনিয়ার বেন জামান
লেখাটা বিশেষত্ ছবিগুলো অনেক সুন্দর হয়েছে