গতকাল ছিল বগুড়া আসার পর সবচেয়ে আরামের দিন। অন্যদিনের তুলনায় বলতে গেলে কোনো কাজই করা হয়নি। কিন্তু রাতের বেলা মনে হচ্ছিলো সবচেয়ে বেশি ক্লান্ত। আনন্দ করা যে খুব পরিশ্রমের কাজ সেটা টের পাচ্ছিলাম! সকালে ঘুম ভেঙে মনে হলো কিছু একটা সমস্যা হয়েছে। চারদিক ভর্তি প্রখর সূর্যের আলো। প্রতিদিন তো ঘুম ভেঙে দেখি অন্ধকার। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বুঝলাম কি সমস্যা। প্রায় ৭টা বাজে! এমনই ঘুম ঘুমিয়েছি যে এতো বেলা হয়েছে টেরই পাইনি। তাড়াতাড়ি উঠেই রেডি হয়ে নিলাম সামনের দিনটার জন্য।

প্রকৃতির ধুলো মাখা গায়ে কোমল শিশুরা, ওদের সাথেই কেটে গেল দিওনগুলো ... শেখানো আর ওদের কাছ থেকে শেখা ও অনেক!
নাস্তার পরেই সবাই সেই পরিচিত বাচ্চাদের মাঝে। প্রাণোচ্ছল শিশুরা,যাদের সময় কাটে গ্রামের মাঠে দৌড়ে,পুকুরে সাঁতার কেটে,রোদের মধ্যে ধানক্ষেতের মধ্যে ঘুড়ি উড়িয়ে। যাদের দেখলেই ইচ্ছে হয় আবার ছোট হয়ে যাই,ছুটে বেড়াই ধানক্ষেতের আইল ধরে……। আজকে বাচ্চাদের দেয়া হলো ইংরেজী worksheet। মজা করে কিভাবে পড়ালেখা শেখা যায় সেই জিনিসটা এই worksheet গুলো দেখলে বোঝা যায়। দুইজন করে বাচ্চাকে দেয়া হয় একটি খাতা,দুইজন মিলে কিভাবে কাজ করা যায় সেটা শেখানোও আমাদের উদ্দেশ্য। ওদের লেখার মাঝে মাঝে সাহয্য করার ফাঁকে গল্প চলে SMU এর স্টুডেন্টদের সাথে। আমরা চাই,বাংলাদেশ সম্পর্কে চমৎকার একটা ধারণা তৈরী হোক ওদের। এই দেশের চমৎকার মানুষগুলোকে বুঝতে শিখুক ওরা।
ক্লাস শেষে আবার IT ক্লাস। আমি,সুহায়লী আর naeem এর দায়িত্ব এই ক্লাসের। কম্পিউটার অন-অফ করতে শেখার তিনদিনের মাথায় কাউকে Microsoft word শেখাতে হলে যে কতো অদ্ভুত কথাবার্তা আর উদাহরণ দিতে হয়,তা আমাকে কেউ বললেও মনে হয় আমি বিশ্বাস করতাম না। ক্লাস নেয়ার মাঝে মাঝেই সবাই এমনভাবে তাকায় যেনো আমি মঙ্গল গ্রহের ভাষায় কথা বলছি। আবার নতুন কোনোভাবে বোঝাতে হয়……এভাবেই কেটে যায় ২টা ঘন্টা।
হালকা কিছু খেয়ে আর একটু বিশ্রাম শেষে কন্সট্রাকশন এর কাজে যেয়ে দেখি আজকে কাজ অন্যরকম। ঘরের চাল ঠেলে আরো উপরে ওঠাতে হবে! ঘরের চাল যে কতো ভারী হতে পারে,আর সেটা বাঁশ দিয়ে ঠেলে তুলতে প্রায় বিশ জন মানুষের কিভাবে বারোটা বাজতে পারে সেটা টের পেলাম……
দুপুরের ভরপেট খাওয়া শেষ হলেই রাজ্যের ক্লান্তি এসে ভিড় করে,ক্লান্ত ভঙ্গিতে বসে থাকি সবাই। কিন্তু কাজের সময় হলেই কোথা থেকে যেনো কাজের শক্তিটা চলে আসে। আজকে অবশ্য দুপুরের পর তেমন কাজ ছিলো না। বিকেলের দিকে ব্যাডমিন্টন খেলায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো অনেকে। গ্রামের মানুষ ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে চারদিকে আর অ্যাকশনিয়ার ও SMU স্টুডেন্টরা খেলছে,দেখতে ভালই লাগে। এর মধ্যেই ওই এলাকার চেয়ারম্যান এসে আলাপ করেন সবার সাথে। project সেবা ও এর উদ্দেশ্য বোঝানো হয় তাকে। খেলায় পরে যায় কিছুক্ষণ বিরতি। কিন্তু চেয়ারম্যান চলে যাবার পরে আবার শুরু হয়ে যায় খেলা।
আমরা বাকি কয়েকজন গ্রামের রাস্তার পাশে ধানক্ষেতে হেটে যাই আর অপেক্ষায় থাকি সূর্যাস্তের। আলো কমার সাথে সাথে চারদিকের প্রকৃতির অপূর্ব পরিবর্তন মনের ভিতর কেমন যেন হাহাকার তৈরী করে। মনে হয় কি যেন নেই……
সন্ধ্যাতে kaminy র জন্মদিন উপলক্ষে হয় কেক কাটা। আর তার পরে খাওয়া হয় সরিষা,গুড় দিয়ে মাখা কাঁচা আম ভর্তা। সেই আমভর্তা খাবার জন্য সবার কি আগ্রহ। যে naeem কে কখনো leader এর পর্দার আড়াল থেকে বের হতে দেখিনি,সেও বাচ্চাদের মতো কাড়াকাড়ি করে আমভর্তা খাচ্ছিলো! SMU এর একজনকে খালি পিরিচ হাতে ঘুরতে দেখে জিজ্ঞেস করলাম আরো নেবে কিনা। মুখ গোমড়া করে আমাকে জবাব দিলো, “আমি নিয়ে গেলেই ওরা আমারটা খেয়ে ফেলে”!! আর আমরা খেতে নিয়ে কি হলো তা আর নাই লিখি……
রাতে খাবার পরেই শুরু হয় অ্যাকশনিয়ার ও SMU এর স্টুডেন্টদের প্রতিদিনের মিটিং। আজ আমাদের মেঝে উঠানের মাটি আর ছাদ আকাশ………। কেমন যেন আবেগী হয়ে যেতে ইচ্ছে হয়। শেষ মিটিং আমাদের! নিজেদের ভুলভ্রান্তি নিয়ে আলোচনার পাশপাশি আমাদের বন্ধুতা ভারী করে দেয় মনের আকাশ।
শেষ রাত খাদুলী গ্রামে আজ। ৫ দিন আগে আসার সময় ভেবেছিলাম কয়েকটা দিন অপরিচিত কিছু মানুষের সাথে কাজ করে ফেরত আসবো। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে,কতগুলো বন্ধুকে ফেলে যেতে হবে! যাদের সাথে আমি ফিরে এসেছিলাম গ্রামের মাটির কাছে,আকাশের কাছে,সাদাসিধে কিছু মানুষের কাছে……যারা আমার মনের ভেতর যে জায়গা করে নিয়েছে তা কোনোদিন কেউ কেড়ে নিতে পারবে না………যাদের কাছ থেকে বিদায় নিতে হবে কালকে……
জাহিদ,অ্যাকশনিয়ার
৩০।/০৮/১১
জাহিদ ভাই, সালাম! অপেক্ষায় ছিলাম। দারুণ!
এবার Action: ছবির ভাষা নিয়ে দুটো লাইন লিখো।