ছবিটা প্রথমবার দেখবার পর বেশ খানিকটা সময় ধরে তাকিয়ে থাকলাম। এই মায়াভরা মুখচ্ছবির অধিকারিণী কি সেই অবহেলিত মেয়েটি যাকে নিয়ে আমায় লিখতে হবে? বিশ্বাস করতে একটু কষ্ট হচ্ছিলো তখন, অস্বীকার করবো না। তাই বারবার করে ছবিটা দেখছিলাম আর ছবির নিচের কথাগুলো পড়ছিলাম।
কথাগুলোর সারমর্ম করলে দাঁড়ায় অনেকটা এরকম-
নাম: হাসিনা
বয়স: ১১
২ ভাইবোন
মা বেঁচে নেই, বাবা অন্যত্র বিয়ে করে সংসারী। বর্তমানে নানা-নানীর সাথে থাকে।
এদেশের প্রেক্ষাপটে খুব সাধারণ কিছু কথা। মনে নতুন করে দাগ কেটে যাবার মত নয়, আমি জানি। কিন্তু সেই মুহূর্তে আমার ভেতরে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি কষ্টের অনুভূতির জন্ম দিয়েছিলো সেটি কেবল একশব্দে প্রকাশ করা যায়; আর তা হলো ‘ভালোবাসা’। আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে ‘মায়ের ভালোবাসা’- পৃথিবীর সবথেকে মধুর অনুভূতি। দুঃখ, কষ্ট, আনন্দ, যন্ত্রণা, জরা, ক্ষোভ- এই সবগুলো অনুভূতির সাথে যে সম্পর্কটি আদ্যোপান্ত জড়িয়ে থাকে সেটি হলো সন্তানের সাথে মায়ের ভালোবাসার সম্পর্ক।
পরীক্ষার তাড়াহুড়ো, কিছু খাবার সময় নেই। নিজের অসুস্থতা ভুলেও ভাতের থালা হাতে সবার আগে কে ছুটে আসে? –মা।
ক্লাস শেষে কখনো বা বাড়ি ফিরতে দেরি, ফোনের পর ফোন আর শুকনো মুখ-চোখে কে অপেক্ষার প্রহর গোনে? –মা।
অসুখে আর যন্ত্রণায় কাতর, রাত জেগে নিজের জীবনের বিনিময়ে হলেও সুস্থতা আর মঙ্গল কামনায় চোখের জলে বুক ভাসায় কে? –মা।
এটা লাগবে, ওটা চাই, আবদার রক্ষার জায়গা কোনটি? –অবশ্যই মা।
‘মা’ নামের এই মানুষটার কত রূপ বর্ননা করা যায়? পৃথিবীর সবথেকে পবিত্র সম্পর্ককে আর কিভাবে ব্যাখ্যা দেয়া যায়? হাসিনার সারল্যমাখা ছবিটার দিকে তাকিয়ে তাই কেমন একটা শূন্যতা আর হাহাকারে মনটা কেঁদে উঠলো। শুধু মায়ের ভালোবাসা পাওয়া থেকেই সে বিরত তা তো নয়, মায়ের কাছে ছোট ছোট দুষ্টু-মিষ্টি আবদার করা থেকেও তো বঞ্চিত। সৌভাগ্যক্রমে, ওর ছোট্ট একটি আবদারের কথা আমি জানতে পেরেছি। আর তা হলো পড়ালেখা করার তীব্র ইচ্ছা। কী ভীষণ রকম সহজ-সরল অথচ শক্ত আবদার! জীবনের কঠিন মুহূর্তগুলোর সাথে প্রতিনিয়ত যারা বেঁচে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত থাকে তারা সাধারণত লেখাপড়া চালিয়ে যাবার আবদার করে না। কারণ শিক্ষা বিষয়টা এই শ্রেণীর মানুষের কাছে অনেকটা বিলাসিতার মত। এজন্যই আবদারটা সহজ-সরল হলেও তা পূরণ করা বেশ শক্ত! তবু অ্যাকশনিয়ার বলেই হয়তো জানি, একটু সাহায্য আর সদিচ্ছার মাধ্যমে এই কঠিন আবদারটা আমরা চাইলেই পূরণ করতে পারি। কমিউনিটিঅ্যাকশনের অ্যাকশন: রূপান্তর এর দরজা এজন্য সবসময়েই খোলা।
ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই মনে হলো হাসিনার জীবনের রূপান্তর সম্ভব। শুধু পড়ালেখা করার ইচ্ছা পূরণই নয়, হাসিনার নানা’কে নতুন কোন স্থায়ী আয়ের উৎস খুঁজে দেয়া, লেখাপড়ার মাধ্যমে হাসিনার জীবনযুদ্ধে বেঁচে থাকার প্রচেষ্টাকে আরও এক ধাপ সহজ করে তোলা, সর্বোপরি হাসিনার পরিবারের বর্তমান অবস্থার রূপান্তর ঘটিয়ে একটা ইতিবাচক অবস্থানে নিয়ে আসা সত্যিকার অর্থেই সম্ভব- কারণ এটাই অ্যাকশন: রূপান্তর এর মূলমন্ত্র।
মানুষ মানুষেরই জন্য। মানুষ হয়ে একজন অপরজনকে ভালোবাসবে, সাহঅ্যা করবে এটাই স্বাভাবিক। আমার ভালোবাসা তোলা থাক হাসিনার জন্য। এই তো সবে শুরু। আশা করছি একদিন ওর জীবনের সত্যিকার রূপান্তরের গল্প লিখতে পারবো। সেই গল্পটি কতটা সুন্দর হয়ে বাস্তবে রূপ নেবে সেটা ভেবে আনন্দে এখনই শিহরিত হচ্ছি আমি। সেদিনের সেই গল্পে যদি আপনিও থাকতে চান কিংবা হাসিনার সাফল্যের গল্পটিকে আরও একটু ত্বরাণ্বিত করতে চান, তাহলে চলুন এখন থেকেই সবাই হাতে হাত মিলিয়ে একসাথে লিখতে শুরু করি নতুন এক রূপান্তরের গল্প।
keep up the good work