“মা গো, আমায় ছুটি দিতে বল, সকাল থেকে পড়েছি যে মেলা। এখন আমি তোমার ঘরে বসে, করব শুধু পড়া-পড়া খেলা। তুমি বলছ দুপুর এখন সবে, নাহয় যেন সত্যি হল তাই, একদিনও কি দুপুরবেলা হলে, বিকেল হল মনে করতে নাই?”
– কবিতাটি পড়েই আপনাদের চোখের সামনে দুষ্টু এক শিশুর ছবি ভেসে উঠল কি? পড়াশুনায় ফাঁকি দিতে যার বাহানার অন্ত নেই! সন্তানের পড়াশুনায় অনাগ্রহ নিয়ে বাবা-মায়ের কতই না দুশ্চিন্তা! আচ্ছা, এমন কি সম্ভব, যে একটি শিশু নিজ আগ্রহে লেখাপড়া করছে? যার মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও নেই,কিন্তু লেখাপড়ার প্রতি সীমাহীন উৎসাহ? হ্যাঁ, এই প্রায় অসম্ভব কাজটিকে সম্ভব করে দেখিয়েছে একজন পথশিশু।
এখন একটি গল্প শুনুন। “এক দেশে ছিল এক রাজকন্যা (গল্পের শুরুগুলো এভাবেই হয় আরকি!)। পরীর মত ফুটফুটেএকটি মেয়ে সে। দারুণ তার প্রতিভা। সে থাকতো ফুটপাথে।”… – গল্পটা পছন্দ হচ্ছেনা,তাইতো? মনে হচ্ছে -রাজকন্যা আবার ফুটপাথে কেমন করে থাকে?! থাকে বৈকি! শুধু একটু কষ্ট করে খুঁজে নিতে হয়। যেমন খুঁজে পেয়েছি আমরা। আয়েশা নাম ওর। ৯-১০ বছরের একটি শিশু। পত্র-পত্রিকার ভাষায় যাকে “পথশিশু” বলা হয়। শব্দটার মধ্যেই কেমন যেন অবহেলা,তাইনা? প্রথম যেদিন ওকে দেখি বুকে ধাক্কার মত লাগে! এত সুন্দর,নিষ্পাপ চেহারার একটা বাচ্চা, ঠিক আমার ছোট বোনটার মত! নাহ্,আমার ছোট বোনকে ফুটপাথে থাকতে হয়না। ওকে ময়লা কাপড় পরতে হয়না। চিন্তা করতে হয়না আগামীকাল সে ৩ বেলা খেতে পারবে কিনা!…
কমিউনিটিঅ্যাকশনের সাথে জড়িত অনেকেই আয়েশার উঠে আসার গল্পটি জানেন। ২০১০ এর অ্যাকশনঃ পিঁয়াজু- বেগুনীতে ওকে প্রথম লক্ষ করে অ্যাকশনিয়াররা। স্নিগ্ধ হাসি আর চোখে বুদ্ধির ঝিলিক! ছড়া- আবৃত্তি, গান,নেতৃত্ব সব গুনই আছে। ছবিতে দেখুন ২ বছর আগের আয়েশাকে-

আয়শা, ২০১০ সালের শেষের দিকে যখন ও ছিল শুধুই পলাশীর কোন এক ছিন্নমূল পথশিশু
আয়েশাকে যথাযথ নির্দেশনা দিয়ে গড়ে তুলতে এগিয়ে আসেন অ্যাকশনঃ রূপান্তর এর অ্যাকশনিয়াররা। আয়েশা এখন পড়ছে একটি স্কুলে ক্লাস ফোর এ। ক্লাস ওয়ান এ ভর্তির ব্যাপারে আপত্তি জানায় স্কুল কর্তৃপক্ষ । কারন কি জানেন? ও “পথশিশু“। সমাজ ওকে এই একটা চার অক্ষরের শব্দে বেঁধে ফেলতে চায়। ওকে বলে- পথ ই তোমার ঠিকানা , সভ্য পরিবারের শিশুরা ওর সাথে একই ক্লাস এ পড়বে ভেবে আতঙ্কিত হয়। যেন কোন সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত সে,আর ওই ব্যাধি যদি ছড়ায় কি জবাব দেবে স্কুল কর্তৃপক্ষ? অনেক চেষ্টার পর অবশেষে তারা রাজি হন আয়েশাকে নিতে, তবে শর্ত হল- আয়েশাকে ক্লাস থ্রি এর ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে!
পাঠক কি বুঝতে পারছেন অল্প ওইটুকু সময়ে একজন প্রায় নিরক্ষর শিশুকে ক্লাস থ্রি এর ভর্তি পরীক্ষার উপযোগী করে তোলা কতোখানি কষ্টসাধ্য ও প্রায় অসম্ভব একটি ব্যাপার? হয়ত স্কুল কর্তৃপক্ষ “সাপ ও মরল না,লাঠিও ভাঙল না” নীতি অবলম্বন করতে চেয়েছিল। করে থাকলেও ধন্যবাদ, নাহলে আয়েশার এমন অভূতপূর্ব প্রতিভা আর হাল না ছাড়া প্রচেষ্টার গল্প কিভাবে শোনাতাম আপনাদের? আর কিভাবেই বা অ্যাকশনিয়ারদের এই যুদ্ধজয়ের কাহিনী লিখতাম!
মাত্র ১৫ দিনে আয়েশা সম্ভব করে দেখালো অসম্ভবকে, অ্যাকশনিয়ারদের চিন্তিত মুখে ফোটাল হাসি, হয়ে গেল অন্যরকম এক পথশিশু!
এরপর আয়েশাকে পড়ানোর পালা। কে কোন বিষয় পড়াবে তা ঠিক করা হল।সপ্তাহে কয়েকদিন আয়েশাকে পড়াতে যেতাম আমি। আস্তে আস্তে বুঝতে পারলাম এই ১০ বছরের এতোটুকু বাচ্চাটা আমার বন্ধু হয়ে গেছে! অনেক গল্প করে ও আমার সাথে,পড়া শেষ করে ওর রাজ্যের কথা শুনতে হয় আমাকে। আমাকে বুলবুলি পাখি চেনালো একদিন, “কখনও দেখিনি আগে” এমন ভাব করে বুলবুলি পাখি চিনতে হল আমাকে! কেমন করে ওর ক্লাস এর কয়েকটা মেয়ে ওকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে সেটা শুনতাম, কার হ্যারি পটারের ছবিওয়ালা পেন্সিল বক্স আছে সেটা জানলাম, হ্যারি পটারটা কে সেটা ওকে জানাতে হল। আমি কেন মাঝে মাঝে এপ্রন পরে আসি ডাক্তারদের মত সেটা জানতে চায় , ওষুধ বানাবো শুনে বলে “ওষুধ তো ডাক্তার এর কাছে গেলেই পাওয়া যায়, সেটা আবার কেন বানাতে হবে?”হাহহা!… আমি এমনিতেই বাসার বাইরে কথা বলি খুব কম,বেশি কথা বলা মানুষগুলোকেও আমার ঠিক পছন্দ হয় না! কিন্তু ও যখন কথা বলে শুনতে অনেক ভাল লাগে, আর ওর কথা বলার বেশি মানুষ নেই,তাই আমাকে বলাটা নিজের অধিকার মনে করে! ওকে পড়িয়ে বাসায় ফেরার পথে আমি খুব হাসতাম, হাসবো না? এত মজার মজার কথা আর কেউ বলে আমাকে?!
প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় আশাতীত ভাল ফল করে আয়েশা। ওর ক্লাসের মধ্যে অংকে সর্বোচ্চ নম্বর পায়! দ্বিতীয় ও তৃতীয় সাময়িক পরীক্ষায়ও বেশ ভালই করে। ইংরেজিতে একটু দুর্বল , কিন্তু আমাদের বিশ্বাস এই দুর্বলতা কেটে যাবে কিছুদিনেই। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধূলায়ও যে সে কম পারদর্শী নয় তারই প্রমাণ করল এবার স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। ২০০ মিটার দৌড়ে প্রথম হয়েছে সে! একই সাথে আরও একটি ২০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেছে আয়েশা, সেটি ছিল আবার হাত বাঁধা দৌড়!

বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার হাতে আয়েশা
ছোট্ট এই মেয়েটির স্বপ্ন – সে ইঞ্জিনিয়ার হবে । যখন জিজ্ঞেস করলাম কেন? ও বলে ইঞ্জিনিয়াররা বাড়ি বানাতে পারে।একটা সুন্দর বড় বাড়ি বানাবে ও, সেখানে ওর বাবা মা ভাইবোন কে রাখবে। আমি ওর স্বপ্ন শুনি, আর ভাবি দেখতে দেখতে কেমন বড় হয়ে যাচ্ছে মেয়েটা! ওর স্বপ্নপূরণের কঠিন পথে আমাদেরকে ওর পাশে থাকার সুযোগ করে দিয়েছেন সৃষ্টিকর্তা ,ভাবতেই ভাল লাগে! মনে মনে বলি- মেয়ে তুমি অনেক বড় হও, পূরণ হোক তোমার সব স্বপ্ন। যেই বুয়েটের পাশে ফুটপাথে এখন তুমি থাকো, একদিন সেই প্রতিষ্ঠানের গর্বিত অংশ হয়ে দেখিয়ে দাও। ভবিষ্যতে অনেক পথশিশুর দায়িত্ব যেন তুমি নিজেই নিতে পার!
আয়েশার মত শিশুদের এই রূপান্তর স্থায়ী করতে শুধু আর্থিক সাহায্যই নয়, প্রয়োজন স্বপ্ন দেখানোর মত কিছু মানুষ, প্রয়োজন আত্মিক সাহায্য। যখন সমাজ ওদের জন্য অনেকগুলো দরজা বন্ধ করে রাখে, তখন সেই বন্ধ দরজাগুলোর চাবি খুঁজতে কাউকে না কাউকে এগিয়ে আসতে হয়। আপনিও হয়ে যান না এরকম একজন মানুষ!
Allah tar sohay hon.Se jeno jibonjuddhe joyi hoy :)
আপনাদের দোআ সাথে থাকলে নিশ্চয়ই পারবে :)
that’s really touching .. !!.. wishing Ayesha all D best.
thanks rivu :)
Khub valo likhcish …tor likha sarthok hok .. Allah Bless U and Aisha
alhamdulillah nd thanks bhaiya :)
Great work and great writing !!!!! ….. oke prai shomoy Buet campus e deki.! n dekei jeta feel hoto that she shouldn’t be like this ,cz she got something inside….a very well candidate for action rupantor :)
alhamdulillah,doa korben :)
Great work! It takes a lot of courage and good will to continue long term project like rupantor! :). Prayers
thanks sabah :) nd u r right :)
Khuboi valo likesho! I hope there are so many like you!
Thanks a lot, doa korben :)
You are doing a novel job for Ayesha! Very inspiring. Your writing is also excellent. Feeling pride that I have such a nice student. May Allah Bless you.
It’s an honour that u have posted a comment. thanks a lot sir,and keep praying always :)
keep it up. :)
InshaAllah :)
.really very inspiring &.feeling proud to be your frnd………….all the very best to Ayesha!
Alhamduillah,dost doa korish :)
আমি জানি না আমি কিভাবে কি করতে পারি , প্রতিমাসে আমি আয়শার জন্য আর কিছু করতে না পারি , তারপর পড়ার জন্য কিছু বই , খাতা আর কলম আমি কিনে দিতে চাই। যদি আমার পক্ষে তা করা সম্ভব হয় তাহলে নিজেকে আমি ধন্য মনে করব।কার সাথে যোগাযোগ করতে হবে বুঝতে পারছি না বলে আমার ফেসবুক প্রোফাইল আর মেইল আডরাস পাঠালাম।।
http://www.facebook.com/avipriyo/info?ref=ts…।
avipriyo_07@yahoo.com
ধন্যবাদ। অনেক শুভকামনা আপনাদের জন্য।
অনেক ধন্যবাদ আগ্রহ প্রকাশ করার জন্য। Actioneers will conatct with u asap. :)
Alhamdulillah…. keep up the spirit :)
InshaAllah, I will :)
Well done! May ALLAH bless you and Ayesha……..:)
Thanks a lot :)
Well done! May ALLAH bless you and Ayesha…… :)
Nice… very nice post…. tomar likha’r style ta valo…full of colors & emotionals….keep up the good work…. :D
Anything that is written from heart,touches the heart :)
Thanks a lot :)
ভাল লাগল পড়ে। অনেক শুভকামনা রইল।
ধন্যবাদ সালেহিন :)
mashaAllah…that’s wonderful..great work! a few more people, like u all, would make the world a better place..
thanks a lot apu :) Doa koro :)
Heart touching.ami biswas kori bangladesh er pothe pothe erokom onek sombabona lukie ace.sudu proyojon ektu sujog.HAT BADAO BONDHU
আমি বেশ কয়েকবারই দেখছি অ্যাকশনিয়ারদের আয়শাকে পড়াতে। বছরখানেক আগে আয়শা আমাকে অনেক জ্বালাতন করছে ফুল কেনা নিয়ে, সেই মেয়ে এখন এভাবে পড়াশোনা শিখছে, দেখে খুবই ভাল লাগছে।
@অ্যাকশনিয়াররাঃ সামনাসামনি বলা হয়নাই, এখানে বলে যাইঃ “Great job! hats off to you!!” :)
I’m inspired……..
really amazing nd praising………! ami moner ontosthol hote doa kori se jeno zibone onek boro hote pare nd er jonno jothestho help pay…..
<3 <3
tears of joy…..
really noble effort…May Allah fulfill Ayesha’s dream and best wishes also for the persons who are executing this task…
Pingback: রূপান্তরের স্বপ্ন – স্বপ্নের রূপান্তর! « Kaniz Afroz
Pingback: রূপান্তরের স্বপ্ন – স্বপ্নের রূপান্তর! « Kaniz Afroz