– এত পড়েও রেজাল্টের এই অবস্থা আমার! ধুর, পড়ালেখাই করবো না আর।
– কী সুন্দর দেখতে মানুষটা! ইশ্, আমিও যদি ওর মত হতাম!
– ও যে কীভাবে এত সুন্দর করে কথা বলতে পারে বুঝি না, উফ্! আমি কেন পারি না?
জীবন নিয়ে তো অভিযোগের অন্ত নেই আমাদের। এটা কেন পেলাম না, ওটা কেন কম পেলাম – এমন মানুষ কমই বোধ হয় যাদের একটা না একটা আফসোস নেই।এমন সব আফসোস অনেক কমে যায় Action: Guardians in the Dark এ কাজ করতে এলে। চোখে দেখতে পান না এমন কত যে মানুষ, অথচ কী অদম্য প্রাণশক্তি একেকজনের।
নিজেদের অপ্রাপ্তিগুলো নিয়ে যতটা সচেতন আমরা, সাধারণত প্রাপ্তিগুলো নিয়ে তার সিকিভাগও না। কেমন হত যদি এই পৃথিবীর আলোই দেখতে না পেতাম কখনো?
Action: Guardians in the Darkএর কাজ হচ্ছে দৃষ্টিহীন এই মানুষগুলোর চোখের আলো হয়ে তাদের জীবনটাকেও আর দশজন মানুষের মত স্বাভাবিক করে তোলা। এর জন্য প্রয়োজন নিজের পায়ে দাঁড়ানো – কেবল চোখে দেখতে পান না বলে যেন অন্যদের করুণার ওপর নির্ভর করে পথ চলতে না হয় সারাটা জীবন। আবার স্বনির্ভর হতে হলে প্রয়োজন শিক্ষা – এই শেখার পথটা যেন আরেকটু সহজ হয়, সে চেষ্টাই করে চলি আমরা – Guardians in the Dark।
ছোট্ট এই কাজটা করতে গিয়ে কত কী যে জানি আর শিখি প্রতিদিন – তার ইয়ত্তা নেই। এসএসসি পরীক্ষার পর থেকে চাকরিজীবনের আগ পর্যন্ত – শিক্ষার্থী অবস্থায় থাকার এতটুকু সময় তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি আমরা। এদের সবাইকেও আবার সাহায্য করা সম্ভব হয় না – আমাদের সীমিত সাধ্যের মধ্য থেকে যতজনকে পারি – আলো দেখানোর চেষ্টা করে চলি।
এসএসসির পরের কথাই ধরা যাক। কলেজে ভর্তি হতে নিয়ে যাই আমরা ওদের। যতসব কাগুজে কাজকর্ম সেরে দেয় আমাদের অ্যাকশনিয়াররা। তারপর ক্লাস শুরু হলে পড়া রেকর্ড করে দেয়া (ওদের টেক্সটবইগুলো রিডিং পড়ে ক্যাসেটে ভয়েস রেকর্ড করা) তো আছেই, যাতে ওরা শুনে শুনে পড়ে ফেলতে পারে! পরীক্ষার সময় এলে শ্রুতিলেখক না পেলে তো আর পরীক্ষাই দেয়া হয়ে ওঠে না ওদের, তাই এরও যোগান চাই (ওরা মুখে বলে দেয়, সেটা শুনে শ্রুতিলেখকরা খাতায় লেখে)। আবার রেকর্ডিং-এর সাথে ব্রেইল বইও করে দেয়া হয় মাঝেসাঝে, যদিও বেশিদিন টেকে না বলে সরে আসতে হচ্ছে এখান থেকে। তারপর ইউনিভার্সিটিতেও একই কাজগুলো চলতে থাকে। DAISY নামে চমৎকার এক পদ্ধতি এসেছে, ইলেকট্রনিকভাবে বই রেকর্ডিং-এর জন্য, বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলের বইগুলো কিছু কিছু করে এর মাধ্যমে তৈরি করে দৃষ্টিহীনদের জন্য একটি লাইব্রেরির কাজও চলছে পূর্ণোদ্যমে।
ওহ্ আর কখনো কখনো প্রাইভেট টিউটরের দরকার পড়ে কলেজপড়ুয়াদের, ওদেরকে পড়ানোর কাজও করে তখন অ্যাকশনিয়াররা। আবার এমন যদি দেখা যায় যে আর্থিক টানাপোড়েনে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে কারো জন্য, তখন তাদের নাম পাঠিয়ে দেয়া হয় Action: Step Upএ, কেউ ভালবেসে তাদের পড়ার খরচ বহন করে যেন। এখানে মেনটর হিসেবে কাজ করি আমরা, ডোনারের টাকা সংগ্রহ করা আর সেটা দিয়ে ওদের যে কোন দরকার মেটানোর কাজ।
কত আনন্দ আর দুঃখের ভাগীদারও যে হতে হয় Action: Guardians in the Dark এ কাজ করতে এসে! জাহান আপুর মত আশ্চর্য আত্মবিশ্বাসী, উদ্যমী মানুষটাকে দেখে অবাক হয়ে যাই আমরা। আবার শ্রুতিলেখক হিসেবে চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা দিতে গিয়ে নিয়োগকর্তাদের ব্যবহারে ব্যথিত হই।
আমরা কি জানি আমরা কতটা ভাগ্যবান? এই সুন্দর সুস্থ চোখ দুটো নিয়ে কত কী-ই না দেখতে, করতে পারি আমরা। শ্রুতিলেখকের অভাবে কোন গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা কখনো বাদ যায় না আমাদের। চাকরি করতে গেলে অযোগ্য বলে গাল শুনতে হয় না – অন্তত পরীক্ষা তো দিতে পারি! পদে পদে বাধা পেতে হয় না পড়ালেখায় – কেউ আমার পড়া রেকর্ড করে কিংবা নোট টাইপ করে না দিলে আটকে থাকে না আমাদের সময়। অফুরন্ত উপহারের মধ্যে ডুবে থেকেও আমরা টের পাই না আমরা কোথায় আছি।
আমাদের সপ্তাহের, মাসের একটা ঘণ্টা, বছরের একটা দিন কি আমরা তাই উপহার দিতে পারি না ওদের? অল্প একটু সাহায্য, একটু হাসি, একটু কথাতেই ওরা যেভাবে কৃতজ্ঞতা জানাবে আপনাকে, যেভাবে ঋণী হয়ে থাকবে আপনার কাছে – না দেখলে বিশ্বাস হওয়ার নয়।
It’s really awesome project.Best of luck to all actioner.
Thank you! :)
:’) Even a smile is charity … :’)
It surely is! :)