কমিউনিটিঅ্যাকশনে কাজ করতে গিয়ে সবচেয়ে কমন অভিজ্ঞতা কী?
আমাদের সাথে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন এমন যে কেউ চোখ বুজে উত্তর দিবেন, শেষ মুহূর্তে একেবারে সব ভেস্তে যাবার উপক্রম হয়, চোখে সর্ষে ফুলের পাঁচটি স্তবকই সবাই স্পষ্ট দেখতে পান, তারপর কীভাবে কীভাবে যেন সবকিছু আবার সুন্দরমত সম্পন্ন হয়, এবং খুব ভালোভাবেই সম্পন্ন হয় আলহামদুলিল্লাহ!! একটি অ্যাকশন সফল করতে যত বেশি চ্যালেঞ্জ সামনে আসে, সেটির আনন্দও তাই তত বেশি! :Dএবারে “অ্যাকশনঃ পিঁয়াজু বেগুনী”তে অংশ নিয়েছিলাম রামপুরা-বনশ্রী জোনে। ৩ আগস্ট এই এলাকার ইভেন্ট, তাই ঠিক এক সপ্তাহ আগে মিটিং ডেকে সবাই মিলে শলা-পরামর্শ করা হল, কীভাবে কী করা সম্ভব। সবাই নিজের থেকে, আত্মীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশী বন্ধুবান্ধব থেকে ফান্ড সংগ্রহ করলেন। প্রস্তুতিও এগুতে থাকল।
৩ তারিখ শুক্রবার। নামাজ পড়েই চলে আসলাম রামপুরার ইস্টার্ন হাউজিং এ। দলবেঁধে এবার প্যাকিং করতে হবে। সবাই গোল হয়ে বসে আছি প্যাকিং এর কাজ করার জন্য, এমন সময়ে আবিষ্কার হল, পিঁয়াজু বেগুনী তখনও চুলায়!!!!!!
সময় যায়, আমাদের টেনশন বাড়ে। হায় হায়! দোকানী নাকি দুপুরে নামাজ পড়ে এসে আমাদের অর্ডারের ৫৫০x৩=১৬৫০টি পিঁয়াজু বেগুনী আলুর চপ বানানো স্টার্ট করেছে। কী সর্বনাশ!
অবশেষে আনোয়ার ভাই গরম গরম পিঁয়াজু বেগুনী নিয়ে যখন আসলেন, বেজে গেছে বেলা ৪টা। ইফতার ৬:৫২ মিনিটে, সুতরাং হাতে একদমই সময় নাই।
আর যায় কোথায়। আমরা দুটি সার্কেলে ভাগ হয়ে বসলাম, সার্কেলের সবার কাজ ভাগ করে দেয়া হল। কেউ প্যাকেটে পিঁয়াজু বেগুনী ভরবে, কেউ খেঁজুর, কেউ ফ্লেভার্ড মিল্ক, কেউ গিট্টু দিবে :D আমি স্টপ ওয়াচ চালু করলাম মোবাইলে ;)
২৫ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডে আমাদের ৫৫০ জনের ইফতার প্যাকিং করা হয়ে গেল! লন্ডন অলিম্পিক চলছিল তখন, এটা অলিম্পিক ইভেন্ট হলে একটা স্বর্ণপদক তো আমাদের জুটতই জুটত, কোন সন্দেহ নাই!! :D
এবার দলগত ছবি তোলা হল, চারটি ভ্যানে করে আমরা রওনা দিলাম- রামপুরা, বনশ্রী, উলন, কুঞ্জবন এলাকায় পথশিশুদের মাঝে ইফতার বিতরণের জন্য। আরেকটা রেকর্ড গড়ে ফেলল ছয় সদস্যের উলন টিমঃ মাত্র ৮ মিনিটে ১৬৮ প্যাকেট বিতরণ কমপ্লিট করে ফেলল!! :D
আমি ছিলাম ওয়াপদা টিমে, একটা মাঠে অনেক বাচ্চাকাচ্চা পেয়ে গেলাম, লাইন ধরে সবাইকে ইফতার দেয়া হল। ইফতার পেয়ে ওদের হাসিটাই আমার কাছে সেরা পুরষ্কার, অনেকে তো মাগরিবের আযানের অপেক্ষা না করেই ফ্লেভার্ড মিল্ক খাওয়া শুরু করে দিল! :D :D :D
কুঞ্জবন এলাকায় ঘটে গেল আরেক মজার কাহিনী। এক নাদুসনুদুস বালককে ইফতার প্যাকেট দেয়া হয়েছে, সে তো পুরা হতভম্ব। ভ্যান এগিয়ে গিয়েছে, একটু পর সে নিজেই উর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ে এসে প্যাকেটটা ফিরিয়ে দিয়ে গেল। বাচ্চাটার কাজ দেখে ছোটবেলায় বাবা-মার শেখানো সেই হুঁশিয়ারী তত্ত্ব মনে পড়ে গেলো-
“অপরিচিত কারো হাত থেকে খাবার নিতে হয় না”!! :D :D :D
ইভেন্টটি সফল করতে পেরে আমরা দারুণ আনন্দ পেয়েছি ঠিক, তবু তাতে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়। একবেলা ইফতার করিয়ে আমরা কী এমন দুনিয়া উদ্ধার করলাম? ঠিক আছে, রমজান মাসে দান খয়রাতের দারুণ ধর্মীয় তাৎপর্য আছে, শিশুদের সাথে খাবার শেয়ার করার মানবিক তাৎপর্য আছে, কিন্তু তবুও এটি কি কোন sustainable solution? আসলে পিঁয়াজু বেগুনীর লক্ষ্য শর্ট টার্মে সেবামূলক কাজ, আর কমিউনিটিঅ্যাকশনের লং টার্ম অ্যাকশনগুলোর লক্ষ্য সেই sustainable development [বিস্তারিত পড়ুন এখানে] আর এ কারণেই, দীর্ঘমেয়াদে সমাজকে, দেশকে কিছু দিতে আমাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবার কোন বিকল্প নেই! আমাদের স্বপ্ন কেবল তখনই বাস্তবায়িত হবে, যখন আমরা এই শিশুগুলোর জীবনে দীর্ঘমেয়াদী পরিবর্তন আনতে পারব, তাদের কিছু রঙ্গিন স্বপ্ন উপহার দিতে সক্ষম হব!
সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও ভালবাসা!
দারুণ। আমিও একটা পোস্ট দিচ্ছি দাঁড়াও! :D
Memeগুলা তো খুব ভাল বানাইছো, আমার মাথায় আসতোই না এই আইডিয়া। হাসতে হাসতে শেষ! =))
হায় হায়! দোকানী নাকি দুপুরে নামাজ পড়ে এসে আমাদের অর্ডারের ৫৫০x৩=১৬৫০টি পিঁয়াজু বেগুনী আলুর চপ বানানো স্টার্ট করেছে। কী সর্বনাশ! =P =P
arekta team e ami chilam shob cheye beshi bhalo lagsilo 3 ta chele khelsilo & amra just iftar gula dewar por oder expression ta beshi joss chilo…… & obviously onek enjoy + experience korsi shei din ta……