দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্যে গড়া লাইব্রেরী – কিছু অনুভূতির আত্মপ্রকাশ

বছর দুয়েক আগে অ্যাকশন : মেহেদী ম্যাজিকের হাত ধরে CommunityAction এ আমার আগমন । এরপর অ্যাকশন : উষ্ণতা, পিয়াজু-বেগুনী , ছবির ভাষার মতো কয়েকটি অ্যাকশন অংশ নেয়ার সৌভাগ্য হয়েছে । তবে CA তে আমার সব চাইতে প্রিয় এবং ভালোবাসার অ্যাকশন ছিল – “Building Bangladesh’s first text book based library for Visually Impaired Students.”

ওপেনিং ওয়ার্কশপের এক পর্যায়ে ৩৬ জনের নাম মুখস্ত করার সেই "ভয়াবহ খেলা" !

ওপেনিং ওয়ার্কশপের এক পর্যায়ে ৩৬ জনের নাম মুখস্ত করার সেই "ভয়াবহ খেলা" !

নামটা যেমন বড়, তেমনি কাজও ছিল ব্যাপক । অনার্স লেভেলের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্যে পাঠ্যক্রম ভিত্তিক বইগুলোর সমন্বয়ে বাংলাদেশের সর্বপ্রথম ইলেকট্রনিক লাইব্রেরীটি গড়ে তোলার লক্ষ্যকে সামনে রেখে ২০১১ সালের ২৬ নভেম্বর ঢাবির সিনেট ভবনের হলে এক অনাড়ম্বর ওপেনিং ওয়ার্কশপের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৩৬ জন বাছাইকৃত শিক্ষার্থীদের নিয়ে অ্যাকশন-প্রজেক্টটির যাত্রা শুরু হয় ।

যাত্রার সেই শুরু থেকে ২০১২-র নভেম্বর পর্যন্ত এতোটা পথ হেঁটে আসার স্মৃতিতে যোগ হয়েছে অনেক প্রিয় মুখের বিদায়ের বেদনা, নতুন মুখের আগমনী উৎফুল্লতা আর চড়াই-উতরাই পাড়ি দেয়ার অভিজ্ঞতা । দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা, বই নির্বাচন, সংগ্রহ , কনভার্শন এবং সব শেষে সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত আজকের রাউন্ড টেবিল মিটিং-এ পুরো প্রজেক্টের পটভূমি, অর্জন ও ঈপ্সিত ফলাফল তুলে ধরার মাধ্যমে দীর্ঘ এক বছর ব্যাপী চলা আমাদের এই প্রজেক্টের ক্রান্তি লগ্ন উপস্থিত হল।

প্রজেক্ট লিডার সেগুফতা মাহী মল্লিক ও আয়েশা আনসারী আপু, রাউন্ড টেবিল FPR + সুপার একশনিয়ার ওয়াহিদ বখশ, CA-র ‘মাস্টার শেফ -KFC ‘ খ্যাত কানিজ ফাতেমা ছন্দা আপু, সাদা মনের মানুষ মুনতাসির নাবিল ভাই, পোর্টেবল পিলার রাব্বি, সদা হাস্যোজ্জ্বল রেদওয়ান, ভাইস ক্যাপ্টেন ফারজানা, ছোটবোন শৌমী, প্রুফ রিডার+ রিপোর্টার তানজিনা, তন্বী, সাদিয়া, গল্পকার রুম্পা, ভোলাভালা সিফাত এবং স্ট্যান্ডবাই একশনিয়ার আনোয়ার সহ নয়টি টিমের ৩৬ জনেরও বেশি একশনিয়ার- সবাই যেনো একটা পরিবারের মতো কাজ করেছি এতদিন। আর তাই আজ প্রজেক্টটা শেষ হবার মূহুর্তে সেই পরিবারটার বাঁধন ছেড়ার কেমন যেনো একটা অদ্ভুত অনুচ্চারিত ব্যথায় ভেতরটা ছেয়ে যাচ্ছে বারবার !

আসলে প্রতিটা সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানই একেকটা মহাকালের মতো । মহাকাল যেমন তার অনন্ত বিস্তৃত সময়ের বাহুডোরে একের পর এক প্রজন্মকে আলিঙ্গন করে নেয়, তেমনি Community Action-ও তার আরও অনেক অ্যাকশন-প্রজেক্টের মতো এই প্রজেক্টের বাহুডোরে বেঁধেছিল আমাদের এতোগুলো প্রাণকে। অনেকেরই হয়তো মনে আছে , ২০১১-র ২৬ নভেম্বর সেই উদ্বোধনী ওয়ার্কশপের শেষের দিকে CA President নাবিলা আপু আমাদের সবাইকে দিয়ে এক বছর মেয়াদী একটা আনুষ্ঠানিক চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছিলেন। আগামী ২৫ নভেম্বর সেই চুক্তির মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে। কিন্তু আমার বিশ্বাস – এই একটা বছর কাজ করতে গিয়ে সম্পূর্ণ অজানা-অচেনা কতগুলো মানুষ এবং সর্বোপরি CA-র জন্যে আমাদের যে ভালোবাসা আর মমত্ববোধ সৃষ্টি হয়েছে, তার মেয়াদ কখনোও উত্তীর্ণ হবার নয়।

অন্যান্য অ্যাকশন-প্রজেক্টগুলোর পাশাপাশি এই বিশেষায়িত প্রজেক্টটায় কাজ করতে গিয়ে আগামী দিনের পথ চলার পাথেয় হিসাবে যে অসাধারণ কিছু অভিজ্ঞতা জীবনের এই ছোট্ট ঝুলিতে জমা হয়েছে, তার জন্যে CA-র প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের কোনো উপযুক্ত ভাষা আমার জানা নেই ।

শুধু প্রার্থনা – মহাকালের অনন্ত অসীম স্রোতে ভর করে হাজারো নবাগত মুখের মিছিল নিয়ে জনম জনম ধরে মুখরিত হোক আমাদের CommunityAction-এর পথ চলা…

_____________________________________________________________________________

প্রজেক্টের শুরুর কিছু কথা –

Bangladesh’s FIRST text-book library for the visually impaired

About সুহৃদ

Actioneer Mashrur Hossain Shurid is currently studying in Electrical & Electronic Engineering at American International University-Bangladesh.
This entry was posted in Action: Guardians in the dark. Bookmark the permalink.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *