নীল
-বেদনার রঙ
সবুজ
-তারুণ্যের রঙ
লাল
-উচ্ছ্বাসের রঙ
কত রঙের কত অর্থ আমাদের কাছে। কিন্তু যাদের কাছে পৃথিবীর সব রঙই কাল, তাদের জীবনটা কেমন?
ভেবে দেখিনি কখনো…বিষয়টা সেভাবে সামনেই আসেনি কখনো।
কিন্তু গত বছরের জানুয়ারিতে বদরুন্নেসা কলেজের হলে গিয়ে জীবনের অর্থটা অনেকটাই বদলে গেল আমার। ইন্টারমিডিয়েট পড়ুয়া কয়েকজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মেয়েদের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। হলের ডাইনিং পার হয়ে যখন গণরুমটাতে ঢুকে ওদের সাথে পরিচিত হলাম, অবাক হয়েছিলাম খুব ওদের স্বাভাবিক চলাফেরা দেখে, ওদের স্বাবলম্বিতা দেখে। গণরুমের চিপা চিপা বিছানার ফাঁকে কি স্বচ্ছন্দে ঘোরাফেরা করছে। বিছানার নিচ থেকে বই বের করে দেখাল আমাকে, মোবাইলের টকিং ক্লক থেকে সময় জেনে আমাকে বলল, নিজেরা মোবাইলের বোতাম টিপে আমার নাম্বার সেভ করে রাখল। সাথে আমার মা ছিল। আমি আর মা দুজনেই যারপরনাই অবাক যে চোখের আলো নেই একটুও যাদের, এই জটিল পৃথিবীর সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম আন্দাজ কত পরিষ্কার তাদের কাছে।
এরপর দিনে দিনে ইংরেজি পড়াতে যাওয়ার খাতিরে ওদের সাথে যত মিশেছি, জীবনের অন্য এক দিক খুলে গিয়েছে আমার সামনে। কতটা ভাগ্যবান আমরা সুস্থ দুটো চোখ পেয়েছি সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে। প্রতিদিন সকালে কাজে বের হয়ে পথের নানা রঙের মানুষের কতশত হইচই, শহুরে পীচঢালা পথে গাছের ছায়া কিংবা দিনশেষের হলুদ সোডিয়াম বাতির নিচে ঘরে ফেরা- কত রঙ্গিন ঘটনা আমাদের চারপাশে…বেশীরভাগই অনুভূত হয় এই চোখ দুটো দিয়ে। একটাবার ভাবতে পারেন চোখ দুটা বন্ধ করে একটা দিন কাটানোর? কেমন অন্ধকার অসহায় আর হতাশার জীবনটা হত !
আর ওরা? পরম করুনাময়ের দেয়া এমন অন্ধকার জীবন নিয়ে কোন অভিযোগ নেই তাদের। এক বর্ণও বাড়িয়ে বলছিনা। কি প্রচণ্ড মানসিক শক্তি ওদের ! বই নেই, বিশেষ কোন ব্যবস্থা নেই পড়ালেখার- তবুও একটু একটু করে কতটা এগিয়ে এসেছে । ভাগ্যের ওপর বিশ্বাস রেখে সামনে যেই বাঁধাই আসে, ডিঙ্গিয়ে যায়। কখন রেকর্ড করে নিয়ে কিংবা কখন সহপাঠীদের সাহায্য নিয়ে একটু একটু করে পড়াশোনা করে। জানার অসীম আগ্রহ আর এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় মানসিকতা ওদের ভেতর।
একেকটা সময় ওদের তুলনায় নিজের সমস্যার কথা ভাবতে গেলে খুব তুচ্ছ লাগে নিজেকে। কি ছোটখাটো বিষয় নিয়ে কত অভিযোগ করি। পছন্দের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পেলামনা নাকি প্রিয় মানুষটা কতটা দুঃখ দিল কিংবা কোন শিক্ষকের গ্রেডিং এর কারনে সিজিপিএ খারাপ আসলো -এইসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে জীবনের কত মূল্যবান সময় পার করে ফেলি দুঃখবিলাসে।
বদরুন্নেসা কলেজের মেয়েরা এখন ওদের ইন্টারমিডিয়েট ফাইনাল দেয়ার শ্রুতিলেখক খুঁজে পাওয়া নিয়ে খুব চিন্তিত। আমরা কি পারিনা ওদের চোখের আলো হয়ে আমাদের জীবন থেকে কয়েক ঘণ্টা সময় দিয়ে ওদের সাহায্য করতে? ওদের জন্য শ্রুতিলেখক প্রয়োজন যে ওদের থেকে শুনে শুনে ওদের হয়ে পরীক্ষাগুলো দিয়ে দিবে। আমাদের বেশি কষ্ট হবেনা তবে ওরা ওদের জীবনে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে।
বিখ্যাত আমেরিকান লেখক হেলেন কিলার (যে কিনা নিজে একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছিলেন!) এর একটা প্রিয় উক্তি দিয়ে শেষ করতে চাচ্ছি-
চোখের আলো না থাকলেও মনের আলো দিয়ে ওরা অনেকটা পথ পাড়ি দিয়েছে। এবার আমাদের পালা আলো জ্বেলে দেওয়ার !
** প্রয়োজনীয় তথ্য ঃ
ফেব্রুয়ারী ২৮ এর ভিতর যোগাযোগ করতে হবে।
শ্রুতিলেখক এইচ এস সি প্রথম বর্ষের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী হতে হবে।
শ্রুতিলেখককে ১২টি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে।
Shotti onek valo likhsen… Shotti e :)
dhonnobad :)
অনুভুতির প্রকাশ দেখে বোঝা গেলো, কাজটাকে আসলেই তুমি নিজের ভেতর থেকে গ্রহণ করেছ। নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি রেগুলার বাসা থেকে বদ্রুন্নেসা যাওয়া-আসা, ওদের পড়ান, সর্বোপরি ওদের জন্যে কিছু ভাবা ও করতে চাওয়ার এই মানসিকতার উত্তম পুরস্কার সর্বশক্তিমান তোমাকে দিক, আপু !
এমন সদিচ্ছা নিয়ে আরো মানুষ এগিয়ে আসুক- শুভ কামনা রইলো।
Thank you bhaia !!!! :) oder porikkha chole ashche khub kache..doa koiro oder jonno !